হাসান চৌধুরী:
এখন পয়লা বৈশাখে পান্তা খেতে দেখা যায় শহরের মানুষকে। ‘পান্তা-ইলিশ’ কবে থেকে কীভাবে যুক্ত হলো নগর সংস্কৃতিতে, তা নিয়ে লিখেছেন তারিক মনজুর। পান্তাভাত হলো পানিতে ভেজানো বাসি ভাত। ‘চর্যাপদ’–এ ভাতের কথা আছে, পান্তাভাতের কথা নেই। কিন্তু ইতিহাস ও সাহিত্যের নানা সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়, প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে পান্তাভাত খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। কাঁচা মরিচ-পেঁয়াজ দিয়েই লোকে পান্তা খেয়ে উঠত। অনেক সময় মানুষ পান্তা খেত শুধু লবণ মাখিয়ে। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা ভাত সাধারণত পরদিন সকালে পান্তাভাত হিসেবে খাওয়া হতো।
এই পান্তা খাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের সানকি বা মাটির পাত্র ছিল না। তারা মাটির হাঁড়ি থেকে পান্তাভাত তুলে নিয়ে কচুপাতায় বা কলাপাতায় করে খেত। বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’–এ (১৬৫০) আছে, ‘আনিয়া মানের পাত বাড়ি দিল পান্তাভাত’। তার মানে, মানকচুর পাতা এনে সেখানে পান্তাভাত বেড়ে খেতে দেওয়া হচ্ছে।
পান্তাভাতের পানিকে বলা হয় ‘আমানি’। এই আমানিও খেত মানুষ। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর ‘চণ্ডীমঙ্গল’ (১৬০০) কাব্যে আছে, ‘মোচড়িয়া গোঁফ দুটা বান্ধিলেন ঘাড়ে।/ এক শ্বাসে তিন হান্ডি আমানি উজাড়ে।।’ ব্যাধ কালকেতুর ভোজনের বিবরণে দেওয়া খাদ্যতালিকা অনেক দীর্ঘ ও অবিশ্বাস্য; তবে মধ্যযুগের পরিশ্রমী মানুষ সহজেই দু-তিন হাঁড়ি আমানি উজাড় করে দিতে পারত।