স্টাফ রিপোর্টার :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন-অর্জনের বিরুদ্ধে ব্যর্থতাকে বড় করে দেখাতে প্রথম আলো বিএনপির সহযোগী হিসাবে প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব পালন করছে। বিএনপিকে সাধু বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে পত্রিকাটি। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতা দিবসে জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তরুণ প্রজন্মের মনে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছে। এটা শুধু অনৈতিকই নয় বরং ফৌজদারি অপরাধ। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে সাধু বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে প্রথম আলো : ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদনের পক্ষে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদত্যাগও তিনি (ফখরুল) দাবি করেছেন। এভাবে একটি জনপ্রিয় সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করতে, বিশ্বসমাজে খাটো করতে, জনবিচ্ছিন্ন করতে, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এমন কোনো অপতৎপরতা নেই, যা বিএনপি নামক দল এবং প্রথম আলো নামক পত্রিকাটি করছে না। তিনি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের ক্রিমিনাল চার্জের তদন্ত হচ্ছে। তিনি গ্রেফতারও হতে পারেন। তাহলে ১০ টাকা শিশুকে দিয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, এটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়? এ অপরাধ কি ক্ষমার যোগ্য?
দিনমজুরের বক্তব্য নাকি প্রথম আলোর বয়ান-ভাবার সময় এসেছে : স্বাধীনতা দিবসে সমালোচিত সংবাদ ও শিরোনামকে মিথ, বানোয়াট, ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার চরম অপমান। প্রথম আলোর সংবাদটি যে ভাষায় একটি দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে, সেটি সাধারণ কোনো দিনমজুরের বক্তব্য নাকি প্রথম আলোর দেওয়া বয়ান-সেটি ভাবার সময় এসেছে। সাত বছরের একটি শিশুকে ১০ টাকা ঘুস দিয়ে তাকে অসৎ পথে পরিচালিত করা কি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা? তিনি আরও বলেন, ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিমিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এ অপচেষ্টা জাতিসত্তাবিনাশী অপতৎপরতা নয় কি?
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের পরিষ্কার পরিপন্থি : ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে পত্রিকাটি আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর জন্য কুৎসামূলক সংবাদ পরিবেশন করে। একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পত্রিকাটি এসব নিষ্ঠার সঙ্গে করে। এছাড়া বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ভুলে গেলে চলবে না-১৯৭৪ সালে এভাবেই ঘুস দিয়ে চিলমারীর প্রতিবন্ধী বাসন্তীকে ১০ টাকার শাড়ি খুলে ৩০০ টাকার জাল পরিয়ে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমি তৈরি করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় তিন দশক বাংলাদেশকে গভীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা হয়েছিল।
এটা ফৌজদারি অপরাধ : ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশেষ দিনে অন্যসব দেশের গণমাধ্যম উদ্দীপনামূলক, অনুপ্রেরণামূলক বাণী দিয়ে নতুনভাবে দেশকে ভালোবাসার উৎসাহ জোগায়। অথচ দৈনিক প্রথম আলো নিজস্ব ও প্রভুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তরুণ প্রজন্মের মনে হতাশা-ক্ষোভ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, অনেকে বলেছে এটা তাদের একটা ভুল। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বাধীনতা দিবসে বাঙালি জাতির ৫২ বছরের অর্জন নিয়ে তামাশা করা সাধারণ কোনো ভুল নয়। এটা শুধু অনৈতিক কাজই নয় বরং একটি ফৌজদারি অপরাধ। সেখানে সুস্পষ্টভাবে জাতিকে বিভক্ত করার উসকানি রয়েছে। দেশের নৈরাজ্য-অশান্তি সৃষ্টি করে একটি মহলের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
‘রিপোর্টার্স ইউদাউট বর্ডার’ নামের সংগঠনের বিবৃতির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বলছে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকার এ ধরনের মামলা করেছে। কিন্তু সরকার কোনো মামলা করেনি। আর ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে কেন? কাকে ভয় দেখাব। যাকে ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, তিনিই এ দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভয় দেখিয়েছেন। দেশের রাজনীতি, সাংবিধানিক ও সরকারকে ভয় দেখিয়েছিলেন। অসাংবিধানিক সরকারের পক্ষে ওকালতি করেছেন, তাদের পক্ষে কাজ করেছেন। এক-এগারোয় কে কাকে ভয় দেখিয়েছে-আমাদের কি মনে নেই? বিরাজনীতিকরণের ফয়সালা নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন, সম্পাদকীয় লিখেছেন। সেগুলো আমরা কি ভুলে গেছি? সেদিন কি বহু আগের?
নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপাতে চায় : রাজধানীর পল্লবীতে বিএনপির ইফতারের দাওয়াতে সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়টি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল দাঁড়িয়ে প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু এর পরপরই তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ওপর তারা দায় চাপাতে চায়। এমনই মিথ্যাচারের রাজনীতি করছে বিএনপি। এর সহযোগী হচ্ছে প্রথম আলো। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার সঙ্গে পারবে না জেনেই বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) নিজেরা নির্বাচনে যাবে না আর নির্বাচন করতেও দেবে না। আমরা দেখব কারা বাধা দেয়। আমরাও প্রস্তুত আছি। আমাদের হাতিয়ার মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার।
‘চলমান সংকটে বিএনপি জাতিসংঘের সহায়তা চায়’-এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা সহায়তা চাইতে পারে। কিন্তু একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ করার কোনো নিয়ম নেই। এটি জাতিসংঘের আওতায় পরে বলেও আমার জানা নেই। এটা বিএনপির বিভিন্ন দেশের কাছে নালিশ করার রাজনীতিরই অংশ।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শাজাহান খান, মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।