বগুড়া প্রতিনিধি
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্ত বিচারকের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষকদের গাফিলতি তদন্তে কমিটি গঠনের আশ্বাস পেয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে তারা।
এর আগে দুপুর তিনটা থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মূলত বিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ক্লাসরুম ঝাড়ু দিতে অসম্মতি জানালে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। গত সোমবার এক শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা থাকলেও নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তার অপর সহপাঠীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই মেয়ে আমাদেরকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করেছে। নিজে বিচারকের মেয়ে বলে সে ঝাড়ু দিতে পারবে না, আর আমরা নাকি বস্তির মেয়ে। এই ধরনের কথা সহপাঠীদের কী করে বলতে পারে। আর স্কুল পরিষ্কার করাটা তো আমাদের এখানে নিয়ম। শুধু আমাদের ক্লাসে নয় সব ক্লাসের ছাত্রীরাই এ কাজ করে।’
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে তার সহপাঠীদের কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আর ওই পোস্টের পাল্টা উত্তর দেয় বিচারকের মেয়ের ৪ সহপাঠী।
এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। পরে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে অভিভাবকসহ ওই ৪ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। ওই সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন বিচারক। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
যদিও প্রধান শিক্ষকের দাবি, দুই অভিভাবক নিজে থেকে পা ধরে ক্ষমা চান। তাদের কেউ বাধ্য করেননি বা পা ধরতে বলেননি।
এ বিষয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে। যতটুকু জেনেছি, সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে মাত্র তিন মাস আগে স্কুলে আসায় এ পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এ কাজটি সে সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে কটূক্তি করে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে স্কুলের অডিটোরিয়ামে নিয়ে আসেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা তার আশ্বাসে বাড়ি ফেরে।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ স্যারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া স্কুলে কোনো শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন কি-না তা তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় তারা বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।